মান্দা, নওগাঁ
নওগাঁ - রাজশাহী মহাসড়কে বাসযোগে ৪০ মিনিট সময় লাগবে
0
ঐতিহ্য বাহী কুশুম্বা শাহী মসজিদ কিভাবে যাওয়া যায়ঃ
কুশুম্বা মসজিদ আত্রাই নদীর দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এবং মান্দা উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দুরে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের পশ্চিমে অবস্থিত।
বর্ননাঃ
বরেন্দ্র জনপদের নওগাঁ জেলার বৃহত্তম উপজেলা মান্দায় অবস্থিত ঐতিহাসিক কুশুম্বা মসজিদ সুলতানী আমলের একটি উজ্জ্বল নিদর্শন। এর মিহরাবের উপরে সুলতান আলা-উদ-দীন হোসাইন শাহ এর নাম লিপিবদ্ধ থাকায় ধারনা করা হয় তাঁর শাসনামলে মসজিদটি নির্মিত হয়। এই মসজিদটি চতুস্কোণ বিশিষ্ট কালো ও ধুসর বর্ণের পাথর এবং পোড়া মাটির ইষ্টক দ্বারা নির্মিত। জ্যামিতিক নক্সার আদলে পোড়ামাটির সুদৃশ্য কারুকাজ খচিত মাটির টালি, মিহরাবে বিভিন্ন ফুল, লতা-পাতা ঝুলন্ত শিকল ও মনোরম শৈল্পিক কারুকাজ যা মুসলিম স্থাপত্য কলার অপূর্ব সমাহার। ইটের তৈরী এই মসজিদের দেওয়াল গুলো বাইরে ও ভিতরে পাথর দ্বারা আবৃত। মসজিদের চার কোনে ৪ টি অষ্টকোনাকার বুরুজ বা টারেট আছে। মসজিদের অভ্যন্তরে দুটি প্রসস্থ স্তম্ভ আছে। এই দুটি স্তম্ভ ও চার পাশের দেয়ালের উপর মসজিদের ৬ টি গম্বুজ আছে। মসজিদটির সম্মূখে ২৫.৮৩ একের আয়তনের একটি বিশাল জলাশয় রয়েছে। মসজিদের অভ্যন্তরে উত্তর-পশ্চিম কোনে স্তম্ভের উপর একটি উচু আসন রয়েছে। এই আসনে বসেই কাজী/বিচারক বিচার কার্য পরিচালনা করতেন বলে ধারনা করা হয়।
অবস্থানঃ
কুশুম্বা মসজিদ নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলাধীন ৮ নং কুশুম্বা ইউনিয়নের কুশুম্বা নামীয় গ্রামে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের পার্শে উপজেলা সদর হতে তিন মাইল দক্ষিন-পূর্ব দিকে অবস্থিত ।
ঐতিহাসিক কুসুম্বা মসজিদ নওগাঁর মান্দা উপজেলায় অবস্থিত। রাজশাহী বিভাগের উত্তরে নওগাঁর অবস্থান। ১১টি নিয়ে উপজেলা নিয়ে এই জেলা গড়িয়েছে। এর মধ্যে মান্দা অন্যতম। কারণ প্রায় সাড়ে চারশ বছরের ঐতিহ্য ও স্মৃতি ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে ‘কুসুম্বা মসজিদ’।
মসজিদটি সুলতানি আমলের অনন্য নিদর্শন ধরে রেখেছে। এর মিহরাবের উপর সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের নাম খোদাই করা আছে। ধারণা করা হয়, মসজিদটি তাঁর শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল। এটি আয়তক্ষেত্রাকার। এই মসজিদটি কালো ও ধূসর পাথর এবং পোড়ামাটির ইট দিয়ে নির্মিত। মাটির টাইলস ব্যবহার করা হয়। মসজিদে জ্যামিতিক নকশায় সুন্দর পোড়ামাটির কাজ। মিহরাবের বিভিন্ন ফুল, পাতা, ঝুলন্ত শিকল ও সুন্দর শিল্পকর্ম রয়েছে। ইটের মসজিদের বাইরের ও অভ্যন্তরীণ দেয়াল পাথর দিয়ে আবৃত। মসজিদের চার কোণে চারটি অষ্টভুজাকৃতির টাওয়ার রয়েছে। এর ভিতরে দুটি প্রশস্ত স্তম্ভ রয়েছে। এই দুটি স্তম্ভ এবং চারপাশের দেয়ালে ছয়টি গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের সামনে একটি বিশাল জলাশয় রয়েছে। বাংলাদেশি ৫ টাকার নোটে কুসুম্বা মসজিদের ছবি ছাপা হয়েছে।
স্থানীয়দের কাছে এর নাম কালপাহাড়। কুসুম্বা মসজিদকে তাই নওগাঁ রাজনীতির ইতিহাস ও মুসলিম শান্তির উজ্জ্বল নিদর্শন বলা হয়। মসজিদের উত্তর-দক্ষিণ রয়েছে ৭৭ বিঘা বিশেষ একটি উল্লেখযোগ্য দিঘি। গ্রামবাসী ও মুসল্লিদের খাবার পানি, গোসল ও অজুর প্রয়োজন মেটানোর জন্য এ দিঘিটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এর পাড়েই করা হয়েছে কুসুম্বা মসজিদ। কুসুম্বা মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে ৫৮ ফুট লম্বা, চওড়া ৪২ ফুট।
চার দিকের দেয়াল ৬ ফুট পুরু। মসজিদের দিকের দিকে রয়েছে। এই কুসুম্বার সমাগম ব্যতিক্রমী একটি পুরাকীর্তি। চারদিকের দেওয়ালের উপর উত্কৃষ্ট অংশ চিত্র দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
মসজিদের সামনের তিনটি দরজার মধ্যে দুটি বড় এবং একটি অপেক্ষাকৃত ছোট। দরজাগুলো খিলানযুক্ত মিহরাব আকৃতির। মসজিদের চার কোণে চারটি মিনার রয়েছে। মিনারগুলো মসজিদের দেয়ালের মতো উঁচু এবং অষ্টভুজাকৃতির। ছাদে মোট ছয়টি গম্বুজ রয়েছে। যা দুই সারিতে তৈরি করা হয়। সুলাইমান মসজিদটি বাংলায় আফগানদের শাসনামলে শূর রাজবংশের শেষ শাসক গিয়াস-উদ-দিন বাহাদুর শাহের শাসনামলে জনৈক সুলাইমান নির্মাণ করেছিলেন। তিনি একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। এই মসজিদের নির্মাণকাল ছিল ৯৬৬ হিজরি (১৫৫৮-৫৯ খ্রিস্টাব্দ)।
ঐতিহাসিকদের মতে, কুসুম্বা মসজিদ মুসলিম স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন। সাবর খান বা সুলায়মান নামে একজন মুসলিম ধর্মান্তরিত এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। প্রধান প্রবেশদ্বারের শিলালিপি প্রমাণ করে যে এই মসজিদটি শের শাহের বংশধর আফগান সুলতান গিয়াস উদ্দীন বাহাদুর প্রথম (১৫৫৪-১৫৬০) এর শাসনামলে ৯৬৬ হিজরি বা ১৫৫৮-৫৯ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়েছিল। সে অনুযায়ী মসজিদটির বর্তমান বয়স ৪৭৪ বছর। কেন্দ্রীয় মেহরাবের উপরের অংশটি শেরশাহের শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল।
প্রথমে আপনার অবস্থান থেকে রাজশাহী শহরে যাবেন। কারণ, রাজশাহীর অতিক্রম না করে এখানে যাওয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আপনি যদি ঢাকা থেকে যাতায়াত করেন তাহলে ঢাকা-রাজশাহীর বাস ভাড়া লাগবে ৫০০ টাকা। এরপর রাজশাহী মহানগরের গোরহাঙ্গা রেলগেট বাসস্টপেজ থেকে নওগাঁর বাসে উঠে ৫০ টাকা ভাড়ায় মান্দার ফেরিঘাটের আগে কুসুম্বা মোড়ে নামবেন। এবং সেখান থেকে নেমে হেঁটে এক মিনিটের মধ্যেই আপনি কুসুম্বা মসজিদ যেতে পারবেন।
আপনি যদি মান্দার ঐতিহাসিক কুসুম্বা মসজিদ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে থাকেন হয়তবা দেখতে যেতে মন চাইবে। আশা করি এখানে আসলে আপনার মন ভালো হয়ে যাবে। এটা অনেক পুরাতন এবং বিখ্যাত একটি মসজিদ এবং বর্তমানে এটি নওগাঁ জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। চাকরীর ছুটিতে আপনি এখানে পরিবার নিয়ে ভ্রমণ করতে পারেন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস