ভাষা
নওগাঁ জেলার নিজস্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে। জেলার মধুইল, সাপাহার, নিয়ামতপুর, ধামইরহাট অঞ্চলের উঁচু নীচু দীঘল ফসলের মাঠ বেয়ে দিনান্তে শ্রম-কিণাংক শরীরে অস্তায়মান সূর্য্যের রাঙা আবির মেঘে আজো সাঁওতাল তরুণ তরুণীরা মোষের পিঠে, পায়ে হেঁটে, বাঁশী মুখে, খোঁপায় বনোফুল গুজে ঘরে ফেরে। এই দৃশ্যপটের প্রেক্ষিতে মুন্ডা উপজাতির গান আমাদের কানে বাজেঃ
বাঘ বাঘিন হার যা থৈই
কুকুর বনায় ধান
বানেক বান্দর লুড়া যা থৈই
গেরুয়া কি বানরে ...........
হায় হায় রে ......... এ ..........এ .........এ
বানেক বান্দর লুড়া যা থৈই ............ ই ............ই ।
বিস্তৃত গ্রামীণ পটভূমিকায় গণ মানুষের মুখে ব্যবহৃত নওগাঁর আঞ্চলিক ভাষার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে । এখানে বৈঠকখানা অর্থে খলা বাড়ির পেছনে অর্থে সোঞ্জার পাছে, প্রত্যুষে অর্থে বিয়ানবেলা আমি অর্থে হামি বা মুই শব্দের ব্যবহার লক্ষগোচর । ’ন’ সহান ল উচ্চারণের উদাহরণঃ নতুন -লতুন-লয়া, নৌকা- লৌকা- লাও, নওগাঁ- লওগাঁ । উত্তর ও পূর্বাংশের লোকে বলে আ’ চে(এসেছে অর্থেঃ অইমা আ’ চেঃ রহিম এসেছে) । পশ্চিমাঞ্চলের লোকে বলে আইচে(অইম্যা আইচে) । দক্ষিনাঞ্চলের লোকে বলে আলচে (অইম্যা আলচে)। উত্তর পূর্বাঞ্চলের লোকে বলে কামডা করোচি (কাজটা করছি) । পশ্চিমাঞ্চলের লোকে বলেঃকামডা করচি।
পুরুষ ভেদে নওগাঁর উপভাষা
উত্তম পুরুষঃ আমি -হামি, মুই-আমার-হামার, মোর।
হামি যামো (আমি যাব)
মধ্যম পুরুষ- তুমিু তুই, আপনি
তুমি যামিন, তুই যাবু, আপ্নি যামিন।
তুমি যাবে, তুই যাবি, আপনে যাবেন।
প্রথম পুরুষ- সে-সে, তারা- ওরা-অরা।
সে যাবে। অরা যাবে ।
সংস্কৃতি
যাত্রা, লোকগান, গ্রাম্য কবিতা, পল্লী এলাকার বিয়ের গীত নওগাঁ জেলায় প্রচলিত আছে বহু শতাব্দী ধরে। এসব আঞ্চলিক গীতে নওগাঁর আবহমান কালের লোক-সংস্কৃতির পরিচয় স্পষ্ট রুপে ধরা পড়েছে। নীচে কিছু উদাহরণ দেয়া হলো
গ্রাম্যগীতি-১
নদীরই এপারে নদীরই ওপারে
নানান পুষ্প ফোটেরে মন মনেরই মতন।
ভাসুর গেছে শ্বশুর গেছে দূরের বাণিজ্য করতে
শ্বশুর আইল ভাসুর আইল পতি কোথায় রইল
রে মন মনের মতন
গ্রাম্য গীতি-২
লগাঁও থ্যাকা ছাড়ালারে গাড়ি
বাড়িত অ্যাসা কান্দাকাটি বুবু ননদী
নদদী লো তোর ভাই ক্যানে বৈদেশী
একলা ঘরে শুইয়ারে থাকি
ভাইএর ল্যাকান স্বপন দেখি বুবু ননদী
ননদী লো তোর ভাই ক্যানে বৈদেশী
গ্রাম্যগীতি-৩
চ্যালে রইল চাল কুমড়া আববা
জাংলার মানান রে কদু।
ওযে দয়ার আববা, জাংলার মানান রে কদু
চালে রইল চাল কুমড়া আববা,
ঘরের মানান রে বেটি।
ওযে দয়ার আববা, ঘরের মানান রে বেটি
চালের কুমড়া চালে থাকলে আববা,
চালও হয় রে, শোভা।
সংগ্রহঃ মোঃ আব্দুল হাই তালুকদার , দ্বীপ চাঁদপুর, আত্রাই, নওগাঁ ।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস