Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ছবি
শিরোনাম
জগদল বিহার
বিস্তারিত

জগদল বিহার ধামইরহাট উপজেলা সদর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরে অবস্থিত। ধামইরহাট-জয়পুরহাট সড়কের হরিতকীডাঙ্গা বাজার থেকে দুই কিলোমিটার উত্তরে এ বিহার অবস্থিত। বৃত্তাকারে প্রায় এক হাজার ফুট এলাকা নিয়ে এ ধ্বংসস্তূপ। এর কাছে রয়েছে আরো একটি দীঘি।

 

কথিত আছে, রাজা রামপাল ভীমকে যুদ্ধে পরাজিত করে পৈতৃক কার্য উদ্ধার করে অত্র এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের জন্য জগদল বিহার স্থাপন করেন। জনশ্রুতি রয়েছে, রাজা রামপাল পরবর্তী সময় জগদলকে রাজধানী করে তার নাম রেখেছিলেন রামাবতী। এ রামাবতী পাল বংশের শেষ রাজধানী। পরবর্তী সময় স্থানীয় লোকজন এ স্থান আম্বর শহর বলে উল্লেখ করেছেন। রাজা রামপাল ১৭ জন পাল বংশীয় রাজাদের মধ্যে চতুর্দশ। কথিত আছে, রাজা রামপাল একাদশ শতাব্দীতে এ বিহার নির্মাণ করেন। জগদল বিহার বৌদ্ধ সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। এখানে বহু বৌদ্ধ পন্ডিত ছাত্র একত্রে ধর্ম চর্চার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এ বিহার সমগ্র উত্তরাঞ্চলের মধ্যে সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ হিসেবে পরিচিতি ছিল। এখানে শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করা হতো। সম্ভবত ১০৭৭ থেকে ১১২০ খ্রিস্টাব্দে পাল বংশ এ অঞ্চল শাসন করে। রাজা রামপাল একাদশ শতাব্দীতে এই বিহার নির্মাণ করেন এবং এখান থেকেই পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার সহ অন্যান্য স্থান দেখা শুনা করতেন বলে অনেকে ধারণা করেন।

 

১৯৯৭ সালে জগদ্দল বিহারে প্রথম বারের মত প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ চালানো হয়েছে। বিহারের দক্ষিণ ও পশ্চিম পার্শে। খননের ফলে,ধ্বংস প্রাপ্ত একটি বিহারের আংশিক স্থাপত্য কাঠামো ও অতিগুরুত্বপূর্ণ প্রত্ন সামগ্রী উম্মোচিত হয়েছে। ৩২ টির বেশি স্থানে খনন ও প্রাচীন চেপ্টা ইট দ্বারা তৈরি করে কক্ষের ধ্বংসাবশেষ। এগুলোর মেঝেতে খনন করে পাওয়া গেছে দরজার চৌকাঠের নিচের অংশ যা দীর্ঘ কালের অলংকৃত পাথরের তৈরি খনন কালে মূল্যবান কালো ছোট বড় মুর্তি মাটির অলংকৃত ইট,বৌদ্ধ ধর্মমতে নামাঙ্কিত পাত্র,লোহার পেরেক সহ ১৩৪ টি প্রত্ন বস্তু পাওয়া গেছে। জগদ্দল বিহারের পূর্ব-পশ্চিমে ১০৫ মিটার দীর্ঘ এবং উত্তর-দক্ষিণে ৮৫ মিটার দীর্ঘ ও চার দিকের ভূমি থেকে ৫ দশমিক ৪০ মিটার উঁচু। ইট ও মৃৎপাত্রের টুকরা থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদগণ ধারণা করেন, নিচে বিশাল ধ্বংসাবশেষ লুকিয়ে আছে। জগদ্দল বিহারের দক্ষিণে সাতটি ভিক্ষু কক্ষ এবং পশ্চিমে চারটি মোট ১১ টি ভিক্ষু কক্ষ আংশিক উন্মোচিত হয়েছে। প্রতিটি কক্ষের পরিমাণ ৩ দশমিক ৫০ মিঃ x৩ দশমিক ৩০ মিটার। প্রবেশ পথে অলংকৃত পাথরের চৌকাঠ (ডোর শিলা) ব্যবহার করা হয়েছে। কোন কোন কক্ষ ও বারান্দায় অলংকৃত দেবী কক্ষ দেখা যায়। এসব দেবী কক্ষে সম্ভবত বৃহদাকারে মুর্তি ছিল। বিহার থেকে আবিষ্কৃত সম্পদ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হলেও এখানে পাথরের তৈরি পিলারে ও কক্ষের নিচে কালো লম্বা (দরজা জানালার উপরে লিলটন ঢালাই আকৃতীর) খন্ডগুলো অরক্ষিত অবস্থায় পরে রয়েছে। একটি লম্বা পাথরে খোদাই করে লেখা রয়েছে। তাতে যে ভাষায় লেখা রয়েছে তা কেউ স্থানীয়রা আবিষ্কার করতে পারেনি।

 

এই বিহারটি প্রাচীন বাংলার শিক্ষা-দীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মতে এ বিহারের দুইজন স্বনামধন্য পন্ডিত হলেন দানশীল ও বিভূতিচন্দ্র। প্রায় ষাটখানা গ্রন্থের তিব্বতী অনুবাদ করেন আচার্য দানশীল। রাজপুত্র বিভূতিচন্দ্র ছিলেন একাধারে গ্রন্থকার, টীকাকার,অনুবাদক ও সংশোধক। জগদ্দল বিহারের আচার্য মোক্ষকর গুপ্ত তর্কভাষা নামে বৌদ্ধ ন্যায়ের উপর একটি পুঁথি লিখেছিলেন। শুভকর গুপ্ত , ধর্মাকর, প্রভৃতি মনীষী আচার্যরা কোন না কোন সময় এই মহাবিহারের অধিবাসী ছিলেন। কথিত আছে যে কাশ্মিরের প্রসিদ্ধ সাধু ও পন্ডিত সাক্য শ্রীভদ্র ১২০০ খ্রিস্টাব্দে বিভিন্ন বিহার দর্শন করে জগদ্দল বিহারে এসেছিলেন। বাংলার জগদ্দল বিহারের বৌদ্ধ পন্ডিত বিদ্যাকর সুভাষিত রত্নকোষ নামে একটি কোষকাব্য সংকলন সমাপ্ত করেছিলেন।